ডেস্ক রিপোট : সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার রমজাননগর ইউনিয়নের টেংরাখালী আরশাদ
আমিনের মোড়ে গত ৮ জুলাই সাবেক ইউ পি সদস্য আঃ বারী ও বর্তমান ইউ পি সদস্য
আঃ হামিদ লাল্টু সমর্থকদের ভেতর সংঘস্বের ঘটনায় ২জন নিহত হয়। এ ঘটনায়
সাবেক ইউ পি সদস্য আওয়ামীলীগ নেতা আঃ বারী বাদী হয়ে গত ৯ জুলাই শ্যামনগর
থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ৭৩ জনকে এজহার নামীয় ৩০/৪০
জনকে অজ্ঞত আসামী করা হয়েছে। সাবেক ও বর্তমান ইউ পি সদস্যের বিরোধের বলি
হয়েছে ২টি অসহয় পরিবার।ঘটনায় নিহত হয়েছেন টেংরাখালী গ্রামের সাকাত শেখের
পুত্র কাদের শেখ ও আবুল সরকারের পুত্র আমির হোসেন। এই দুই জনই তাদের
পরিবারের এক মাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি ছিলেন । ঘটনার দিন বর্তমান
মেম্বার আঃ হামিদ লাল্টুর লোকজনের সাথে মারামারি করতে সাবেক মেম্বার আঃ
বারী নিহত দুইজন সহ তার সমর্থকদের নিয়ে ইট পাটকেল লাঠিসোটা নিয়ে আরশাদ
আমিনের মোড়ে অবস্থান নিতে উদ্ভুদ্ধ করেন। সে মোতাবেক ঘটনাস্থলে লাঠি, রড
এবং ইটের দিয়ে উভয় পক্ষের ভেতর মারামারি হয়েছে বলে প্রতক্ষদর্শী ও
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঘটনার ভিডিও চিত্র ভাইরাল সুত্রে জানা
যায়। মূল ঘটনা ফ্যান মেরামত কেন্দ্রিক হলেও উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে
আওয়ামীলীগের অফিসে হামলা করে তাদেরকে মারা হয়েছে বলে ঘটনায় দায়ের হওয়া
মামলার বাদী আঃ বারী তার মামলায় উল্লেখ করেন।তাছাড়া ৯ জুলাই সকাল থেকে
শ্যামনগরে রমজাননগর ইউনিয়নের একজন প্রভাবশালী নেতার বাসায় সাবেক ইউ পি
সদস্য আঃ বারী, আঃ গফ্ফার তরফদারসহ ৪/৫ জন মিলে কাকে ককে আসামী করা যায়
তার তালিকা প্রস্তুত করেছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সুত্র এ
প্রতিবেককে নিশ্চিত করেছেন। বাদী আঃ বারী মামলায় আরও উল্লেখ করেন
রমজাননগর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ইউ পি সদস্য আলী আজগর বুলুর হাতে থাকা
রাম দায়ের কোপের আঘাতে নিহত কাদের শেখের পায়ের রগ কেটে যায় এবং ৮ নং
ওয়াডের ইউ পি সদস্য আঃ হামিদ লাল্টু এর হাতে থাকা চাইনিজ কুড়ালের কোপে আঃ
কাদেরের মাথায় প্রচন্ড ক্ষত হয় যার ফলে কাদেরের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া
কালিঞ্চি গ্রামের আজবাহারের পুত্র জাকির, মৃত জিয়াদ গাজীর পুত্র আজবাহার,
মুজিবর রহমান, আজিবর, মুকুল মৃত কাশেম গাইনের পুত্র গফ্ফার গাইন, মুকুল
গাজীর পুত্র মুন্না হাকিম গাজীর পুত্র হাফিজুর রহমান দেরকে আসামী শ্রেনী
ভুক্ত করা হয়েছে। অথচ তারা ঘটনাস্থলে ছিলেন না প্রতক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন,
ঘটনায় কোন পক্ষের হাতে চাইনিজ কুড়াল ছিলো না। তাছাড়া ঘটনার সময় উল্লেখিত
আসামী শ্রেনীভুক্তদের ঘটনার সময় অবস্থান সম্পর্কে কালিঞ্চি গ্রামের কাদের
গাইনের পুত্র হযরত গাইন, রেহান কাগুচির পুত্র রশিদ কাগুচি, মৃত নাজের
গাজীর পুত্র মীর আলী আহাদ আলীর পুত্র আকবর ঢালী, কালাচানের পুত্র বক্কার
সহ একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে কালিঞ্চি বদিউজ্জামানের বাড়ীর
উপরের মসজিদে ৯ নং ওয়ার্ডের ইউ পি সদস্য আলী আজগর বুল সহ বাদীর মামলার
এজহারে বর্নিত একাধিক আসামী আসরের নামাজ আদায় করে কালিঞ্চি প্রাইমারী
স্কুল সংলগ্ন রফির মার্কেটে বুলু মেম্বারের অফিসে অবস্থান করেছিলেন। এর
পরে তারা একই মসজিদে মাগরিবের নামাজ আদায় করেছেন। অথচ বাদী আঃ বারী তার
এজহারে আলী আজগর বুলু একই সময়ে হাতে রাম দা নিয়ে টেংরাখালী আরশাদ আমিনের
মোড়ে আসরের পরের ঘটনায় নিহত কাদের শেখের পায় কোপ দিয়ে আহত করেছেন মর্মে
দেখিয়েছেন। বাদী আঃ বারী, ৯নং ওয়াডের সাবেক ইউ পি সদস্য আওয়ামীলীগ নেতা
গফ্ফার মেম্বার,সহ তাদের দলীয় লোকজন বুলু ও লাল্টুর ফাঁসি দাবী করে
মানববন্ধন করছেন। সচেতন মহল দাবী করছেন বুলু মেম্বার যদি ঘটনাস্থলে
উপস্থিত না থাকে তাহলে কাদের শেখের পায়ে যে আঘাত হয়েছে সেটা কিভাবে
হয়েছে? ঘটনায় যদি চাইনিজ কুড়ালের ব্যাবহার না হয়ে থাকে তবে নিহত কাদের
শেখের মাথায় আঘাত কিভাবে হয়েছে? ইতিমধ্যে ঘটনার একটি ভিডিও চিত্র সামাজিক
যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত হয়েছে যেখানে সংঘর্ষে জড়িতদের হাতে লাঠি
ও ইট পাটকেল দেখা গেছে। বাদী আঃ বারীর মামলার আসামী কালিঞ্চি গ্রামের
আজবাহারের পুত্র জাকির ঘটনার আরও ১৫ দিন পূর্ব থেকে জীবিকার তাগিদে ঢাকা
শহরে রিক্স চালাচ্ছে। বর্তমানে ঢাকা শহরের অনেক এলাকা সিসি ক্যামেরার
আওতায় আছে। সিসি ফুটেজে যদি প্রমান হয় জাকির ঢাকাতে ছিলো তবে বাদীর
এজহারে জাকির কর্তৃক যে আঘাত করার অভিযোগ আনায়ন করা হয়েছে তা কে করেছে?
বাদীর এজহারে কালিঞ্চি গ্রামের জিয়াদ আলীর পুত্র আজবাহারকে আসামী করা
হয়েছে । ঘটনার সময় আজবাহার বুলু মেম্বারের সাথে তার অফিসে উপস্থিত ছিলো
মর্মে প্রতক্ষদর্শীগন এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন। ঘটনার সময় কালিঞ্চি
ঠাকুরঘেরী মন্দির মাঠে এক ফুটবল টুর্নামেন্ট চলছিলো উক্ত টুর্নামেন্টে
বাদী আঃ বারীর এজহারে বর্নিত আসামী কালিঞ্চি গ্রামের মৃত কাশেম গাইনের
পুত্র গফ্ফার গাইন খেলা করছিলেন যা কালিঞ্চি গ্রামের শত শত দর্শক খেলাটি
দেখেছেন সে সময়ে আসামী গোবিন্দসহ আর কয়েকজন সেখানে ছিলো বলে
প্রতক্ষদর্শীগন জানিয়েছেন। অথচ তাদেরকে আসামী করা হয়েছে। কালিঞ্চি
গ্রামের রনজিত বৈদ্য ঘটনার সময় কালিঞ্চি মুরশিদা শাহিনের দোকানে কেরাম
খেলছিলেন এবং বাদী আঃ বারী তার এজহারে কালিঞ্চি গ্রামের জিয়াদ আলীর পুত্র
আজিবর কে আসামী করেছেন অথচ আজিবর ঘটনার কয়েকদিন পূর্বে তার পুত্র বিদেশ
থেকে ফিরবেন বলে ঢাকাতে অবস্থান করছিলেন।অনুসন্ধানে এসব তথ্য বেরিয়ে
এসেছে তাছাড়া নিরাপরাধকে আসামী করার পেছনে রাজনৈতিক ফায়দা যা কালিঞ্চি
গ্রামের সাবেক ও বর্তমান ইউ পি সদস্যের মধ্যে আওয়ামীলীগের রাজনীতি ও ইউ
পি ভোটের রাজনীতির দ্বন্দ্বে প্রতিশোধের তথ্য পাওয়া গেছে। কালিঞ্চি
গ্রামের বর্তমান মেম্বার বাদী আঃ বারীর মামলার ২ নং আসামী আলী আজগার বুলু
তিনি রমজাননগর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়াড আওয়ামীলীগের সেক্রেটারী এবং বর্তমান ইউ
পি সদস্য তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক মেম্বার আঃ গফ্ফার তরফদার যিনি ৯ নং
ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি। এই দুই জনের দীর্ঘ দিনের বিরোধের প্রতিশোধ
হিসাবে টেংরাখালীতে ডাবল মাডার ঘটনা ঘটার সাথে সাথে আঃ গফ্ফার তরফদার
বাদী আঃ বারীর সাথে সার্বক্ষনিক অবস্থান করে নিরাপরাধদের মামলায় জড়িছেন
বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। তাছাড়া ভুক্তভোগীরা দাবী করছেন কিছু দিনের
ভেতর রমজাননগর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটি গঠন হবে। ইউ পি
নির্বাচনের মত দলীয় রাজনীতিতে এসব নেতা পদ হারানোর ভয়ে জনপ্রিয় ২জন ইউ পি
সদস্যকে মামলায় ফাসিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছেন।
আলোচিত এই ডাবল মার্ডরের ঘটনায় প্রশাসনের উচ্চ পর্যায় থেকে বিভিন্ন
পর্যায়ে তদন্ত চলছে বলে জানা গেছে। প্রকৃত ঘটনা উৎঘটন করে দোষীদের আইনের
আওতায় আনার জন্য সকল মহল থেকে দাবী উঠছে। ঘটনার বিষয়ে সাবেক ইউ পি সদস্য
আঃ গফ্ফার তরফদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন বুলুর সাথে স্কুলের কমিটি
কেন্দ্রিক বিরোধ ছাড়া তার সাথে আর কোন বিরোধ নেই। ঘটনার দিন ঠাকুরঘেরী
মন্দিরের মাঠে ফুটবল টুনামেন্টের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন , খেলায় কে
কে খেল ছিল তা তিনি দেখেননি এবং মামলায় নাম ঢুকানোর বিষয়ে তার কোন হাত
নেই। ঘটনার পর থেকে কালিঞ্চি ও টেংরাখালী এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ
করছে। গ্রেফতার ও হামলার ভয়ে পুরুষ মানুষ এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে সেই সুযোগে
ছেচড়া চোরের উপদ্রুপ বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। নিহত কাদের শেখ
ও আমির হোসেনের পরিবারে এখনও শোকের মাতম চলছে। আমির হোসেনের মা এখনও
প্রলাপ করছেন এবং তার স্ত্রী গর্ভে থাকা সন্তানের এবং স্বামীর শোকে কথা
বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। নিহত কাদের শেখের পরিবার ঘটনাটি ফ্যান মেরামত
কেন্দ্রিক স্বীকার করে সামন্য ফ্যান মেরামত কেন্দ্রিক ঘটনায় জীবন চলে
যাওয়ায় দোষীদের কঠোর শাস্তি দাবী করেছেন। নিহত পরিবারের ভাষ্য,
প্রতক্ষদর্শীরা কার আঘাতে খুন হয়েছে তা সঠিক করে বলতে না পারলেও মামলার
বাদী আঃ বারী খুনের দায় তার প্রতিপক্ষ আঃ হামিদ লাল্টু ও আলী আজগর বুলুর
উপরে চাপিয়ে মামলা দায়ের করে রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার চেষ্টা অব্যহত
রেখেছেন। এ ঘটনায় শ্যামনগর থানায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তার
কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন মামলার এজহার নামিয় ৪জন এবং অজ্ঞত ৫ জনকে আটক
করে আদালতে প্রেরন করা হয়েছে অণুসন্ধান চলছে প্রকৃত দোষীদেরকে আইনের
আওতায় আনা হবে।